ওযুর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা - ওজুর ফজিলত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক , ওযুর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা জানার জন্য অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করছেন কিন্তু এর সদুত্তর কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না। আমি স্টেপ বাই স্টেপ ওযুর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। যদি আপনি ওযুর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা ও ওজুর ফজিলত বিস্তারিতভাবে জানতে চান তাহলে , এই আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন। আপনার কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন ।
প্রিয় পাঠক ,এই আর্টিকেলে ওযুর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা ও ওজুর ফজিলত শুধু আলোচনা করা হয় নাই। এছাড়া ও আরো অনেক পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেগুলো যদি আপনি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণটা খুব মনোযোগ ও গুরুত্ব সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃওযুর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা সুন্নত জেনে নিন
ভূমিকা
এই আর্টিকেলে অজুর ফজিলত , ওজুর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা , ভাইরাস দূর করতে অজুর গুরুত্ব , অযুর ফরজ ও সুন্নত কয়টি ও কি কি? , ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি , অজু করার সুন্নত তরিকা , ও মেয়েদের ওযু করার নিয়ম বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। যদি আপনি অজু সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণটা পড়ুন।
ওযুর ফজিলত
যে ব্যক্তি নামাজের জন্য উত্তমরূপে ওযু করবে আল্লাহ তা'আলা তাঁর ছগিরা গুনাহকে মাফ করে দিবেন।
যে ব্যক্তি উত্তম রূপে ওযু করে এরপরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ খুশু খুজুর সাথে অর্থাৎ সঠিক নিয়ম পদ্ধতি মেনে আদায় করবে কেয়ামতেরদিন নামাজী ব্যক্তিদেরওজুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো নুরে ঝলমল ঝলমল করতে থাকবে সেই অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো দেখে দেখে রাসূলে কারীমসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকেজান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
ওযুর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা সুন্নত
ওজুর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা অনেক রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সব কিছু জানেন ,সব কিছু খবর রাখেন , কোন কাজ বান্দার জন্য মঙ্গল হবে, আর কোন বান্দার জন্য অমঙ্গল হবে সেটাও আল্লাহ ভালো জানেন। আল্লাহ আমাদেরকে সুস্থ রাখার জন্য ওযু নামকএবাদত দান করেছেন। যেই ওজু নামে এবাদত , আমরা প্রত্যেক নামাজের আগে করে থাকি। জেনে নেওয়া যাক এর উপকারিতা কি?
আরো পড়ুনঃ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা - খেজুর খাওয়ার নিয়ম
কব্জি সহ হাত-আমরা মুসলমান ওযু করা আমাদের জন্য একটি এবাদত এই এবাদত দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অসংখ্য অশুখ থেকে ওষুধ ছাড়া আমাদেরকে মুক্তি দান করেন। বিভিন্ন জীবাণু থেকে আল্লাহ তাআলা নিরাপদে রাখেন। ওজুর মধ্যে সর্বপ্রথম যে অঙ্গ আমরা ধৌত করি সেটা হচ্ছে দুই হাত কব্জিপর্যন্ত ধৌতো করা। এর মধ্যে নিগুড় রহস্য রয়েছে ।
আমরা বিভিন্ন জিনিসে হাত দিয়ে থাকি, হাত দিয়ে বিভিন্ন কাজ করে থাকি এতে হাতে জীবাণু লেগে যায় দুই হাত ধৌত করার দ্বারা জীবাণুগুলো মুক্ত হয়ে যায়। অন্যথায় কুলি করার সময় এই জীবাণুগুলো মুখের লালার সাথে মিশ্রিত হয়ে পেটের মধ্যে চলে যেত , পেটে গিয়ে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হতো।
কুলি করা-দুই নম্বর আমরা কুলি করি, এবং মেসওয়াক করি। মুখ দ্বারা আমরা খানা খাই, এবং মুখ দ্বারা কথা বলি এতে বিভিন্ন জীবাণু মুখে চলে যাই, কুলি ও মেসওয়াক করার দ্বারা জীবাণু গুলো মুক্ত হয়ে যায়।
নাক-ফুসফুসের জন্য এমন বাতাস প্রয়োজন যে বাতাসটা জীবাণু , ধুলাবালি , ধোয়া থেকে মুক্ত হতে হবে এবং বাতাসের মধ্যে ৮০ভাগ আর্দ্রতা থাকতে হবে। ফুসফুসের মধ্যে বাতাস পৌঁছানোর জন্য আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যে নেয়ামত দান করেছেন সেটা হল নাক। এই নাক প্রতিদিন বাতাসকে স্যাতে সেতে করে দূষিত মুক্ত করে ফুসফুসের মধ্যে প্রবেশ করায় ।
এর দাঁরা বুঝা যায় নাকের মধ্যে কতগুলো যন্ত্র রয়েছে এক নাম্বার প্রতিদিন নাক ১ থেকে ৪ গ্যালন আর্দ্রতা সৃষ্টি করে এরপর ভেতরের দিকে দেয়, নাকের মধ্যে আরেকটি যন্ত্র রয়েছে যেটা জীবনু মুক্ত করার জন্য নেট হিসাবে কাজ করে , যেটা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। এই নেটের কাজ বাতাস কে জীবাণুম মুক্ত করে ফুসফুসের মধ্যে দেওয়া। নাকে পানি দেওয়ার দ্বারা বিশুদ্ধ করন যে নেট রয়েছে সেটা সচল হয়ে যায় এর দ্বারা আমাদের ফুসফুস ভালো থাকে।সমস্ত মুখ-আমাদের যে মুখ রয়েছে সেই মুখে প্রতিনিয়ত ধুলাবালি জীবাণু লাগতেই থাকে। যদি চোখ ও চেহারা ধৌত না করা হয় তাহলে আমাদের চেহারা ও চোখ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞগণ বলেন মুখমন্ডল ধৌত করার দ্বারা মুখ এলার্জি মুক্ত থাকে, জীবাণুমুক্ত থাকে , চক্ষু ধৌত করার দ্বারা ,চোখে যে ধুলাবালি প্রবেশ করেছে করেছে সেগুলো বিদুরিত হয়ে যায় ।ফলে ভাইরাস ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। দিনে পাঁচবার মুখ ধৌত করার দ্বারা মুখের ময়লা দূরীভূত হয়ে যায় , মুখ লাবণ্য ময় হয় , মুখ দাগ মুক্ত হয় ।
হাত কোনুইসহ-এরপর আমরা হাত কোনুই সহ ধৌত করি। কনুইয়ের মধ্যে তিনটি এমন বড় বড় রগ রয়েছে যা মস্তিষ্ক যকৃত ,হৃদপিন্ডের সাথে সম্পৃপ্ত। কোনুই সাধারণত সব সময় কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে। যদি কোনুয়ের এর মধ্যে পানি ও বাতাস না লাগে তাহলে যকৃত , মস্তিষ্ক হৃদপিন্ডে বিভিন্ন রোগ দেখা যেতে পারে। ওযু করার সময় কোনুইসহ ধৌত করার দ্বারা মস্তিষ্কে ,হৃদপিণ্ডে ,যকৃতিতে শক্তি পৌঁছে থাকে ফলে এ সমস্ত রোগ হওয়া থেকে নিরাপদে থাকে।
মাথামাসাহ-এরপর আমরা মাথা মাছাহ করি এর দ্বারা মাথার ধুলাবালি জীবাণু মুক্ত হয়ে যায়। এরপর কান মাসাহা করি কাণ মাসাহ করার দ্বারা কান জীবাণু মুক্ত হয়ে যাই, গর্দান মা্সাহ করার দ্বারা গর্দান জীবনু মুক্ত হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
দুই পা-এরপর আমরা পা ধৌত করি সবচেয়ে বেশি ধুলা বালি ু জীবাণু বেশি লেগে থাকে পা ধৌত করার ফলে সম্পূর্ণ জীবাণু মুক্ত হয়ে যায় যতটুকু থাকে পায়ের আঙ্গুলগুলো ভালোভাবে ধৌত করার দ্বারা তাও দূরীভূত হয়ে যায় । পা ধৌত করার ফলে ভয় ভীতি , মস্তিষ্কের শুষ্কতা , অস্বস্তিকর রোগ সমূহ দূরীভূত হয়ে যায়। ফলে মানুষ সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করতে পারে এছাড়াও ওযুর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা অনেক রয়েছে।
ওযু করার সুন্নত তরিকা
প্রতিটা কাজের কিছু নিয়ম বা কিছু পদ্ধতি রয়েছে অজু করারও একটি পদ্ধতি বা সুন্নত রয়েছে ।
- অজুতে নিয়ত করা সুন্নত।
- ওযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত
- দোনো হাতের কব্জি সহ তিনবার ধোয়া সুন্নত
- মেসওয়াক করা সুন্নত
- তিনবার কুলি করা সুন্নত
- তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত
- সমস্ত মুখ তিনবার দোয়া সুন্নত
- ঘন দাড়ি খিলাল করা মুস্তাহাব
- দুই হাতের কোনুই সহ তিন বার ধোয়া সুন্নত
- দুই হাতের আঙ্গুলগুলো খীলাল করা সুন্নত
- মাথা মাসাহ করা সুন্নত
- দোনো কান-মাসাহ করা সুন্নত
- গর্দান মাসাহা করা মুস্তাহাব
- দোনু পায়ের টাকনো সহ তিনবার দোয়া সুন্নত।
ভাইরাস দূর করতে ওযুর গুরুত্ব
ভাইরাস দূরীকরণে ওযুর গুরুত্ব অপরিসীম। ভাইরাস দূর করতে দিনে পাঁচবার যদি কেউ অজু করে তাহলে তার শরীরে জীবাণু ভাইরাস প্রবেশ করতে পারেনা ।ওযুর মধ্যে এমন সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করার ব্যাপারে বলা হয়েছে , যা ধৌত করলে সমস্ত জীবানু দূরীভূত হয়ে যায়। ফলে মানুষ সুস্থ থাকে ,ফুসফুস ভালো থাকে , মস্তিষ্ক ভালো থাকে , হৃদপিণ্ড ভালো থাকে , যকৃত ভালো থাকে ।বিস্তারিত উপরে অধ্যায় (ওজুর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা সুন্নত দেখুন)
পাদ দিলে কি ওযু ভেঙে যায়
ওযু ভঙ্গের কারণ সাতটি । সাত কারণের মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে পেশাব , পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া। এর দ্বারা বোঝা যায় পায়খানা রাস্তা দিয়ে যদি পায়খানা হয় অজু ভেঙ্গে যাবে । আর যদি বাতাস আঞ্চলিক ভাষায় পাদ বলে সে পাদ বের হলে ও অজু ভেঙ্গে যাবে।
মেয়েদের অজু করার নিয়ম
মেয়েদের ওযু করার নিয়ম। ছেলে এবং মেয়েদের ওযু করার নিয়ম বা পদ্ধতি একই ধরনের শুধুমাত্র মাথা মা্সাহ এর ক্ষেত্রে এবং আংটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সামান্য কিছু পার্থক্য রয়েছে । সেই পার্থক্যটা হলঃ যখন মেয়েরা মাথা মাসাহ করবে তখন কোন কোন রেওয়াতে আছে ভিজা হাত মাথার সামনের দিক থেকে নিয়ে গিয়ে কাধ পর্যন্ত ছেড়ে দিবে।
আরো পড়ুনঃ লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
অন্য রেওয়াতে আছে ছেলেরা যেভাবে মাসাহা করে অর্থাৎ হাত সামনের দিক থেকে কাধ পর্যন্ত আবার কাধ থেকে সামনের চুলের গোড়ার অংশ পর্যন্ত নিয়ে আসবে এভাবে মাসাহা করবে। দুই হাতের আংগুলি খিলাল করার সময় হাতের আংটি গুলো নাড়াচাড়া করে পানি পৌঁছাবে।
অজুর ফরজ, ও সুন্নতকয়টি ও কী কী
অজুর ফরজ ৪টি
- সমস্ত মুখ ধোয়া । (যাতে করে একটি পশম ও শুকনো না থাকে)
- দুই হাতের কোনুই সহো ধোয়া
- মাথা মাসাহ করা
- দুই পায়ের টাকনু সহ ধোয়া
অজুর সুন্নত১১ টি
- নিয়ত করা সুন্নত
- অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত
- দুই হাতের কব্জি সহ তিনবার ধোয়া সুন্নত
- মেসওয়াক করা সুন্নত
- তিনবার কুলি করা সুন্নত
- তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত
- সমস্ত মুখ তিনবার ধোঁয়া সুন্নত
- দুই হাতের কোনুই সহ তিনবার ধোয়া সুন্নত
- মাথা মাসাহ করা সুন্নত
- দোনো কান মাসাহ করা সুন্নত
- দুই পায়ের টাখনু সহ তিনবার ধোঁয়া সুন্নাত
অজু ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টিওকি কি
অজু ভঙ্গের কারণ সাতটি
- পেশাব পায়খানা রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া
- মুখ ভরিয়া বমি হওয়া
- শরীরের ক্ষতস্থান হইতে রক্ত পুজ বা পানি বের হইয়া গড়িয়া পড়া
- থুতুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বেশি হওয়া
- চিত বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া
- পাগল ও মাতাল অচেতন হওয়া
- নামাজের ভেতরে উচ্চস্বরে হাসা
শেষ কথা
আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে, ওযুর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা ও সুন্নত, ওজুর ফজিলত ,অজু করার পদ্ধতি, ওযুর ফরজ ও সুন্নত, ওযু ভঙ্গের কারণ, মেয়েদের অজু করার নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে। যদি আপনার কাছেএই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে, তাহলে যারা এ বিষয়ে জানে না দয়া করে তাদের কাছে শেয়ার করে দিন। আর নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।