পেয়ারা চাষ করে আমরা কিভাবে স্বাবলম্বী হতে পারি তা জেনে নিই
প্রিয় পাঠক আপনি পেয়ারা চাষ করে কিভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন সে বিষয়ে আপনি
অনেক জায়গায় জানার জন্য খোঁজাখুঁজি করছেন কিন্তু কোথাও এর বিস্তারিত তথ্য খুঁজে
পাচ্ছেন না। আমি আপনাকে স্টেপ বাই স্টেপ কিভাবে পেয়ারা চাষ করে স্বাবলম্বী হতে
পারেন সে বিষয়ে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। যদি আপনি পেয়ারা চাষ
পদ্ধতি বিস্তারিত ভাবে জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব
মনোযোগ ও গুরুত্ব সহকারে পড়তে থাকুন আপনার প্রশ্নের সদর উত্তর পেয়ে যাবেন।
প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলে শুধুমাত্র পেয়ারা চাষ করে কিভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন
এই বিষয়েই শুধু আলোচনা করা হয় নাই এছাড়াও আরো অনেক পয়েন্ট নিয়ে
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে ।যদি আপনি সে বিষয়গুলো বিস্তারিত ভাবে জানতে
চান তাহলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণরূপে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন ।
পোস্ট সূচিপত্রঃ পেয়ারা চাষ করে আমরা কিভাবে স্বাবলম্বী হতে পারি তা জেনে নিই
- ভূমিক
- পেয়ারা চাষের উপকারিতা
- থাই পেয়ারা চাষ পদ্ধতি
- পেয়ারা গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
- পেয়ারা গাছের রোগ ও প্রতিকার
- পেয়ারার ফুল আসার সময়
- পেয়ারা ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার
- শেষ কথ
ভূমিকা
এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে পেয়ারা চাষ করে অনেকগুলো স্বাবলম্বী হতে পারি।
পেয়ারা চাষের উপকারিতা , থাই পেয়ারা চাষ পদ্ধতি পদ্ধতি , সার প্রয়োগ পদ্ধতি ,
পেয়ারা গাছের রোগ ও প্রতিকার , পেয়ারারফুল আসার সময় , ও পেয়ারা ঝরে পড়ার
কারণ ও প্রতিকার এ বিষয়গুলো সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে।
পেয়ারা চাষের উপকারিতা
পেয়ারা একটি বাংলাদেশের অন্যতম ও জনপ্রিয় ফল। যেই ফলকে বাংলার আপেল বলা হয়
কারণ আপেলের মধ্যে যে পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে একটি পেয়ারার মধ্যেও সেই পরিমাণ
ভিটামিন রয়েছে। পেয়ার এমন একটি ফল যেটা কাঁচা আধা পাকা এবং পাকা সকল অবস্থায়
খাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে ভিটামিন-সি অন্যান্য
ভিটামিন রয়েছে। পেয়ারা খেলে মানুষের শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকে। বাজারে এর
অনেক চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশের প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়।
এই পেয়ারা চাষ করে অনেক কৃষক স্বাবলম্বীহচ্ছে আপনিও পেয়ারা চাষ করে
স্বাবলম্বী হতে পারেন।
থাই পেয়ারা চাষ পদ্ধতি
থাই পেয়ারা একটি সুস্বাদু পেয়ারা। অল্পদিনেই এই পেয়ারা বিস্তার লাভ করেছে
এখন সব সময় থাই পেয়ারা চাষ হচ্ছে বারোমাসি থাই পেয়ারা পাওয়া যাচ্ছে অনেকেই
এই থাই পেয়ারা চাষ করে সফলতা অর্জন করেছে ।যত দিন যাচ্ছে থাই পেয়ারার চাষী
বাড়ছে। আপনিও পেয়ারা চাষ করে লাভবান হতে পারেন। তাই আসুন তাই পেয়ারার চাষ
পদ্ধতি জেনে নিই।
স্থান নির্বাচন
স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেলে বা দোআঁশ মাটি থাই পেয়ারার জন্য বেশি
প্রযোজ্য।
পেয়ারার শিকড় দেড় বা দুই সেন্টিমিটার নিচে থাকে। অতএব ওপরের ভাগ যেন
উপর থাকে ।উষ্ণ এবং আর্দ্র পরিবেশ পেয়ারা চাষের জন্য উপযুক্ত। সামান্য
ছায়াযুক্ত স্থানে ও পেয়ারা চাষ করা যায়।এবং যে স্থানটা নির্বাচন করবেন সেই
স্থানটা যেন পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে ও প্রচুর জৈব সার সমৃদ্ধ সেচ সুবিধা
থাকে। পেয়ারা গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।
পেয়ারার জাত
পেয়ারা গাছ লাগানোর আগে জাত নির্বাচন করতে হবে অর্থাৎ যেই গাছটা আমি লাগাবো
সেটা যেন ওই যাতের থেকে হয়। যেন আমি ভুল করে অন্য কোন চারা লাগিয়ে না ফেলি
তাহলে এতে আমি থাই পেয়ারা পাবনা অন্য পেয়ারা হয়ে যাবে। এজন্য জাত
নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখে শুনে লাগাতে হবে।
আরো পড়ুনঃ আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জেনে নিন
চারা প্রস্তুত করুন
বীজও কলম দুভাবেই পেয়ারা চারা তৈরি করা যায়।বীজ থেকে চারা তৈরি করতে হলে
,ভালো জাতের বড় পাকা ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে ।বীজ সংগ্রহ হয়ে গেলে
বীজতলায় বপন করে চারা প্রস্তুত করা যায় । আজকাল পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করা
হচ্ছে। ছোট পলিথিনবেগে জৈব সার মিশ্রিত মাটি ভরে প্রতিটিতেএকটি করে চারা তৈরি
করা হয় । বড় হলে চারা লাগানোরউপযোগী হয়।
কলম পদ্ধতি
কলম পদ্ধতিতে পেয়ারার চারা তৈরি করা যায় । পেয়ারার চারার মাতৃ গুনাগুণ
পুরাপুরি বজায় থাকেবে বলে ভালো জাতের চাষ করতে কলমের চারাই ব্যবহার করা
উত্তম।পেয়ারা বংশ বিস্তারের জন্য গুটি কলমের সবচেয়ে উপযোগীগুটি কলম করতে
হলেএক থেকে দেড় বছর বয়স্ক20 থেকে 30 সেন্টিমিটার লম্বা ডালের গোড়ায় কলম
করতে হবে ।
জমি তৈরী ও গর্তখনন
নির্বাচিত জমি কে আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে আগাছা মুক্ত করতে হবে তারপর
বর্গাকার ঝড় ভুজি রোপণ পদ্ধতি অনুসরণ করে তিন থেকে চার মিটার দূরত্বে আশি
সেন্টিমিটার চওড়া ও ৮০ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করতে হবে।বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাস
গর্ত খননের উপযুক্ত সময় ।
চারা রোপনের সময গর্তের মাটির সাথে প্রয়োজনীয় সার মিশিয়ে নিতে হবে।
চারা রোপন
প্রয়োজনীয়সার মিশ্রিত মাটিতে উপযুক্ত চারা কিছু পাতা ছেটে নিয়ে গর্তের ঠিক
মাঝখানে লাগাতে হবে।লাগানোর সময় চারার গোড়ার বল যেন ঠিক থাকে সেদিকে খেয়াল
রাখতে হবে ।আষাঢ় শ্রাবণ মাস চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় । অতি
বর্ষণের সময় চারা লাগানো উচিত নয়।চারা লাগানোর পর কিছু মাটি উঁচু করে দেওয়া
উচিত।
পেয়ারা গাছের পরিচর্যা
পরিচর্যার মধ্যে চারা অবস্থায় বেড়া দেওয়া আগাছা পরিষ্কার করা মাটি আলগা করে
দেওয়া, সময় মত সেচ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছেটে
দেওয়া এবং বেশি ফুল আসলে মাঝে মাঝে ফুলগুলো ছিঁড়ে ফেলা এবং পোকামাকড় দমন করা
প্রয়োজন।
পেয়ারা গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
পেয়ারা চারা লাগানোর আগে গর্তে ২০ থেকে ২৫ কেজি জৈব সার প্রয়োগ করা , ১৫০
থেকে ২০০ গ্রাম টি এসপি এমপি ভালো মিশিয়ে নিতে হবে। চারা লাগানোর পর গাছ যখন
বাড়তে থাকবে ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও দু কিস্তিতে ওপরে প্রয়োগ করতে হবে। গাছের
বয়স যখন আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে বাৎসরিক সার প্রয়োগের মাত্রা ও কিছু কিছু
বাড়তে থাকবে।
পেয়ারা গাছের রোগ ও প্রতিকার
ছাতরা পোকাঃ আক্রান্ত ডাল এবং পাতায় এরা দলবেঁধে থাকে এবং দেখলে
সাদা ছাতা বা তুলার মতো দেখায় । সাদা রংয়ের পোকা কচি পাতা, শাখা এবং ফল থেকে
রস চুষে খাই আক্রান্ত অংশ শুকিয়ে যাই এবং ফলন কমে যাই। সে ক্ষেত্রে ওয়ান মিলি
মেল থিওন-৫৭ ইসি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়।
ফলের মাছিঃ সাধারণ মাছির মতো দেখতে এ জাতের স্ত্রী মাছি ফলের গায়ে
ডিম দেয় বের হয়ে ফল ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে ফলের শ্বাস খেয়ে নষ্ট করে। এ পোকা
দমনে এক গ্রাম ডিপট্রেক্র এক লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
কুরানি পোকাঃ ডাল ছিদ্র করে কুরে খায়। ছিদ্রে আলকাতার কলেপ দিয়ে
দমন করা যায়।
রোগ বালাইঃ এনথ্রাক নোজ নামক রোগের আক্রমণ বাংলাদেশের সব জায়গায়
দেখা যায়। ফলের গায়ে ছোট ছোট কালো দাগ এ রোগের লক্ষণ ডাইথেন এম-৪৫ অথবা
বর্দমিকচার ১ লিটার পানির মধ্যে দিয়ে মিশিয়ে দিলেএ রোগ কম হয় ।
পেয়ারার ফুল আসার সময়
পেয়ারা যখন ফুল আসে চারার গোড়ার মাটি হালকা করে শক্ত করে দিন।এতে ফুলগুলো
গাছে ভালোভাবে আটকিয়ে যাবে। ফাল্গুন মাসে ফুল আসার সময় ও বৈশাখ মাসে ফল আসার
সময়। এখন 12 মাসই ফুল হচ্ছে ফল ও বারো মাস হচ্ছে। বাজারে প্রতিদিনি পেয়ারা
পাওয়া যাচ্ছে। তবে ফুল আসার সময় কৃষিবিদদের সাথে পরামর্শ করে পরিচর্যা করা
দরকার।
পেয়ারা ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার
পেয়ারা ঝরে পড়ার সর্বপ্রথম পেয়ারা কেন ঝরছে কারণ তার কারণনির্ণয় করতে হবে।
এর পরে প্রতিকার বের করতে হবে তাই আসুন আমরা কারণ ও প্রতিকারগুলো জেনে নিই।
হ্যাঁ কাজ করেন।
- পেয়ারা গাছের পরিচর্যা ঠিকমতো না হওয়ার কারণে পেয়ারা ঝরে পড়তে পারে।
- যেই সময় পেয়ারা গাছের সেচ দেওয়া দরকার সে সময় সেচ না দেওয়ার কারণে ঝরে পড়তে পারে।
- সারের অভাবে পেয়ারা গাছ দুর্বল হয়ে পড়লে পড়তে পারে।
- একটা গাছের যে পরিমাণ পুষ্টি দরকার সেই পরিমাণ পুষ্টই না পেলে আস্তে আস্তে গাছ ও দুর্বল হয়ে যেতে থাকে এবং যে ফুলগুলো আসে সেগুলো ফলে পরিণত হয়ে পড়ে যেতে পারে।
- গাছে ইঁদুরের কারণে পেয়ারা ঝরে পড়তে পারে। ইঁদুর পেয়ারার বোটা কেটে দেয় সেই কারণে ঝরে পড়তে পারে।
প্রতিকার
পেয়ারা ঝরে পড়লে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে ,গাছে কোন প্রকার পরগাছা না
থাকে। গাছের ঠিকমতো পরিচর্যা যেন হয় । এছাড়া সময় মত সার প্রয়োগ, সময়মতো
সেচ , সময়মতো বিষ প্রয়োগ , গাছে যেন কোনভাবেই ইঁদুর না প্রবেশ করতে পারে। এই
জন্য যেই ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ইঁদুর উঠতে না পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে
হবে।এছাড়াও অবস্থা ভেদে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি।
শেষ কথা
এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে , পেয়ারা চাষ
করে একজন চাষী কিভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে ।যদি আপনার কাছে এই আর্টিকেলটি
ভালো লেগে থাকে তাহলে যারা পেয়ারা চাষের বিষয়ে জানেনা তাদের কাছে দয়া
করে শেয়ার করে দিন।আর নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট
করুন।